শরীর সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সবথেকে বেশি প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিমাণে ঘুম। একজন মানুষের সারাদিনের কর্মক্ষমতা অনেক টাই নির্ভর করে তার রাতে ঠিকঠাক মতো ঘুম হওয়ার উপরে। একজন মানুষ যদি রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যায় তাহলে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে। তখন তার সারাদিনের কাজ করার জন্য যথেষ্ট সময় পায়। আমরা সকলেই একটা কথা খুব ভালোভাবে জানি “Early To Bed, Early To Rise, Makes a Man Healthy, Wealthy and Wise”।
সকালে ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা
আমাদের যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষ তাদের কিছু কিছু অভ্যাসের মাঝে পরিবর্তন করেছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি পরিবর্তন হচ্ছে রাতে দেরী করে ঘুমাতে যাওয়া ও তার কারণে দেরীতে ঘুম থেকে উঠা।
শরীর ও মন ভালো থাকে
সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে আমাদের শরীর এবং মন দুটোই খুব সতেজ থাকে এবং আমরা আমাদের সারাদিনের কাজ করার জন্যে নিজেদের মধ্যে কাজ করার উদ্দীপনা খুঁজে পাই। আমাদের হাতে যত বেশি কাজ থাকে আমরা যদি সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখা যাবে খুব সহজে আমরা সেই কাজ শেষ করে ফেলতে পারবো।
কাজের চাপ থেকে বাঁচা যায়
আমাদের হাতে যখনি অনেক কাজ থাকে তখন আমরা মানসিক ভাবে এক ধরনের চাপ অনুভব করি আর রাতে ঠিকঠাক মতো ঘুমাতে পারি না এবং আমাদের পরের দিনের শুরুটা ও খারাপ হয়। আমরা যদি সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে কাজগুলো করে ফেলতাম তবে আমরা আমাদের এই মানসিক চাপ থেকে খুবই সহজে মুক্তি পেতে পারি এবং আমাদের দিনটাকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারি।
পড়াশোনাতে ভালো করা
যারা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়াশুনা করে দেখা যায় যে তারা অন্যদের তুলনায় অনেক ভালো ফলাফল করে থাকে। আর এটার অন্যতম কারণ হচ্ছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমালে এবং ভোরে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলে আমাদের মস্তিষ্ক বেশ সচল থাকে। আর তখন আমরা কোনো ধরনের চাপ অনুভব না করায় চিন্তামুক্ত ভাবে পড়াশুনা শেষ করতে পারি এবং সেই পড়াগুলো অনেক দিন মনেও রাখা সম্ভব হয়।
মানসিক চাপ কমে
যারা রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে সকালে ঘুম থেকে উঠে তাদেরকে এক প্রকার সুখী মানুষ আমি বলতে পারি।প্রতিদিনের কাজ প্রতিদিন সম্পন্ন করে এবং এতে করে তারা মানসিকভাবে কোনো ধরনের চাপ অনুভব করেনা এবং খুব নিশ্চিন্ত মনে রাতে সহজে ঘুমাতে যেতে পারে এবং জীবনের প্রতিটি দিন জীবনকে উপভোগ করতে পারেন খুবই সুন্দরভাবে।
সকালের নাস্তা
সকালের নাস্তা আমাদের প্রত্যেকের জন্যে খুবই উপকারী। কারণ যদি আমরা আমাদের সকালের নাস্তা ঠিকঠাক মতো করি তবে আমাদের সারাদিনের কাজ করার জন্য আমরা শারীরিকভাবে শক্তি পাবো এবং এতে করে আমাদের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। তাই অধিক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্যে আমাদের সকালে উঠে নাস্তা করা অতীব প্রয়োজন।
ব্যায়াম
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ব্যায়াম। যদি আমরা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ব্যয়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলি তাহলে আমাদের শরীর এবং মন উভয়ই সতেজ থাকবে। ব্যয়াম করার কারণে আমরা রাতেও সুন্দর গভীর ঘুম দিতে পারবো।
বিশুদ্ধ বাতাস
আমাদের এই কোলাহল পূর্ণ নগর জীবনে সতেজ বাতাস পাওয়াটা বর্তমানে খুব একটা সহজ নয়। কিন্তু যদি আমরা সকালবেলা ঘুম থেকে উঠতে পারি তাহলে আমরা কিছুটা হলেও সকালের বিশুদ্ধ বাতাস উপভোগ করতে পারবো আর আমাদের শরীর পেয়ে যাবে বিশুদ্ধ অক্সিজেন।
কিভাবে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠা সম্ভব?
মানুষ অভ্যাসের দাস। চাইলেই তারা কয়েকদিন একটি কাজ নিয়ম মতো করলে না চাইলে তখন তার সেই কাজের অভ্যাস হয়ে যায়। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার উপকারিতা সম্পর্কে আমরা সকলেই কম বেশি জানি। কিন্তু তারপরেও আমরা এই সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠাকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত করতে পারিনা। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠা কিভাবে সম্ভব সেই বিষয়ে আমরা এখন আলোচনা করব।
পরিমাণ মতো ঘুম
একজন মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা সময় ঘুমের প্রয়োজন আছে। ৮ ঘন্টা ঘুমিয়ে সকাল বেলা উঠতে হলে অবশ্যই রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে হবে। যদি আমরা সকালে ৬ থেকে ৭ টায় ঘুমাতে চাই তবে আমাদের রাত ১০ টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে।
রুটিন তৈরি
আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে একটি রুটিনের মাঝে আনলে আমরা খুবই সহজে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে পারবো। ফজরের নামাজ নিয়মিত পড়ার অভ্যাস করে ফেল্লেই আমরা একটা নামাজ পরা অনুভব করবো এবং তখন নিয়মিত সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার মাধ্যমে আমাদের দিনটাকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারবো।
মোবাইল, টিভি থেকে দূরে থাকা
আমাদের সব মানুষের একটি অভ্যাস হচ্ছে রাতে ঘুমানোর পূর্বে মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন দেখার অভ্যাস রয়েছে এটি আমাদের ঘুমের জন্যে অনেক ক্ষতিকর। তাই ঘুমের পূর্বে আমাদের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে ফেলা উচিৎ আর মোবাইল, ল্যাপটপ, টেলিভিশন দূরে রাখা উচিৎ। এলার্ম দেয়ার সময়ে মোবাইলের পরিবর্তে এলার্ম ক্লক ব্যবহার করার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিৎ।
বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
রাতে ঘুমানোর সময়ে যদি আমারা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি তবে তা আমাদের জন্যে অনেক উপকারী। মোবাইল ফোন নয় ঘুমানোর সময়ে হাতে বই নিয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করলে আমাদের জ্ঞানের বিকাশ হবে এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে।
দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস পরিহার করুন
আপনার যদি দুপুরে ঘুমানোর অভ্যাস থাকে তাহলে সবার আগে সেই অভ্যাস ত্যগ করতে হবে, কেননা দুপুরে ঘুম হলে রাতে তাড়াতাড়ি ঘুম চলে আসবে না। সকালে ঘুম থেকে উঠার পরে সারাদিন কাজ করার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে হয়ে জায় এবং রাতে খুবই ভালো ঘুম হয়।
চা,কফি না খাওয়া
সন্ধ্যার পরে চা বা কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং রাতের খাবার ঘুমাতে যাওয়ার ১ থেকে ২ ঘন্টা পূর্বে সেরে ফেলতে হবে। খাওয়ার পরে হাটাহাটি করলে রাতে ঘুম ভালোভাবে হবে।
পরের দিনের কাজের তালিকা তৈরি
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠার জন্যে ঘুমাতে যাওয়ার অনেক আগে পরেরদিন কি কি কাজ করতে হবে তার একটি লিস্ট তৈরি করে রাখা উচিৎ। তাহলে সকাল বেলা থেকে আমাদের কাজ সহজভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
দেরি করে ঘুমাতে না যাওয়া
ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠার জন্যে আমাদের অবশ্যই রাতে তারাতারি ঘুমাতে হবে এমন নয়। যে রাতে ২/৩ টায় ঘুমানোর পরে সকাল বেলা ভোরে উঠে দিন শুরু করবো। এতে আমাদের মেজাজ থাকবে খিটখিটে এবং কোনো কাজে মন বসবে না শরীরের ক্লান্তি অনুভব করবো।
ভালো ফল করার ইচ্ছা
আমাদের যদি পড়াশুনার অনেক চাপ থাকে আর ভালো ফলাফল করার ইচ্ছাশক্তি থাকে তবে আমরা সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমাদের পড়াশুনা শেষ করার পাশাপাশি আমাদের অন্যান্য কাজগুলোকেও শেষ করতে পারবো।
মৃত্যু ঝুঁকি কমানো
রাত জাগা মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি একজন ভোরবেলা উঠা মানুষের চাইতে বেশি, একদল গবেষক এটি গবেষণা করে বাহির করছেন তাই আমাদের মৃত্য ঝুঁকি কমানোর জন্যে হলেও আমাদের রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হবে এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়তে হবে।
তাই সর্বশেষ বলা যায় যে, শরীরকে সুস্থ রাখতে, সারাদিন টাকে কাজে লাগাতে ও নিজেকে সুখী মানুষ হিসাবে গড়ে তোলার জন্য সকালে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস গড়ে তোলা প্রয়োজন।