ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

হাসিবুর
By -
0

দিন দিন পর্যায়ক্রমে দেশে কিডনির সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন হাজারো মানুষ। বিশেষ করে আমাদের শরীরে জ্বর হলে তেমন একটা গুরুত্ব দেই না বরং নাপা, প্যারাসিটামল খেয়ে নেই। কিন্তু এই জ্বর ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া তলপেটে হালকা হালকা ব্যাথা এসব থেকেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে কিডনিতে।

কিডনিতে সমস্যা হলে ডায়ালাইসিস এর মাধ্যম বেছে নিতে হয় এবং ডায়ালাইসিস গ্রহণ করলে অনেক কিছু থেকে সচেতন থাকতে হয় ও ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয় সেটা সম্বন্ধেও ধারনা রাখবেন।

ডায়ালাইসিস রোগীদের ক্ষেত্রে আয়রনের অভাব, র*ক্তস্বল্পতা ইত্যাদি ধরনের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। সেজন্য র*ক্ত তৈরির জন্য ইনজেকশন, আয়রন অথবা অন্য কোন প্রক্রিয়া ডাক্তারের পরামর্শে নিতে পারেন এবং জেনে নিবেন ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হবে।

সাধারণত কিডনি সম্বন্ধে যারা জানতে চান তাদের কমন একটি প্রশ্ন থাকে ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয়? তো আসুন জেনে নেই, ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয় এবং ডায়ালাইসিস সম্বন্ধে অন্যান্য সব বিষয়গুলি।

{tocify} $title={Table of Contents}

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

ডায়ালাইসিস কত দিন পর পর করতে হয়

ডায়ালাইসিস কতদিন পর পর করতে হয়, তা চিকিৎসকের মতে, নির্দিষ্ট কোন হাসপাতালে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ডায়ালাইসিস গ্রহণ করতে হবে এবং প্রতিদিন চার ঘন্টার মত র*ক্ত পরিশোধনের কাজ করা হয়।

এবং যাদের সাময়িকভাবে কিডনি বিকলের সমস্যা ঘটে তাদের ক্ষেত্রে মাত্র কয়েকটি ডায়ালাইসিস গ্রহণ করার পরই কিডনির সমস্যার সমাধান হয়ে যায়, পরে আর ডায়ালাইসিস নিতে হয় না। কিন্তু যাদের বেলায় কিডনি সমস্যায় খুব বেশি সম্মুখীন বা পঞ্চম ধাপের রোগী তাদের ক্ষেত্রে সারাজীবন চলতে হবে ডায়ালাইসিস প্রক্রিয়াটি।

(ads)

আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগীর খাবার তালিকা

ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান এর কাজ কি?

মানুষের শরীরের র*ক্ত থেকে অতিরিক্ত বর্জ্য পদার্থ নিষ্কাশন করাই হচ্ছে ডায়ালাইসিস। যে সকল রোগীদের দেহে কিডনির সমস্যা জনিত এই প্রক্রিয়াটি সঠিকভাবে সম্পূর্ণ হয় না, তাই বাইরে থেকে তাদের মেশিনের সাহায্যে প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণ করানো হয়। এবং এই কাজের সাথে যারা সংযুক্ত থাকেন বা এই কাজ যারা সম্পন্ন করেন মূলত তারাই ডায়ালাইসিস টেকনিশিয়ান।

কিডনি রোগীরা যা যা খেতে পারবেন এবং যা যা খেতে পারবেন না

মানুষের জীবনযাপনে পরিবর্তন, খাদ্যে ভেজাল এই নানাবিধ কারণে দিনদিন কিডনি রোগী বা নানা ধরনের রোগের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিডনির সমস্যা দেখা দিলে শুরুর থেকেই পরিবর্তন আনতে হবে খাবারে, হিসেব করে খাবার খেতে হবে এবং তা হতে হবে পরিমান মতো সঠিক খাবার। কিডনি রোগীদের জন্য যে খাবারগুলো গ্রহণযোগ্য।

  • সবজির মধ্যে খেতে পারেন, লাউ, করলা, কচু শাক, ঝিংগা, পেঁপে, ডাঁটাশাক, হেলেঞ্চা শাক ইত্যাদি।
  • প্রাণিজ আমিষের ক্ষেত্রে, দুধ, ডিম, মাছ, মাংস রোগীদের ডায়েটিশিয়ানদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিমাণ মতো।
  • ফলের মধ্যে, পেয়ারা, আপেল, পাকা পেঁপে, নাশপাতি ইত্যাদি। তাও খুব বেশি নয় পরিমাণমতো খাবেন।

শরীরে কিডনি রোগ শনাক্ত হওয়ার পর, আপনার প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ০.৫ থেকে ০.৮ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন পড়ে এবং গুরুতর রোগীর জন্য প্রয়োজন ০.৫ গ্রাম। তাই রোগীর খাদ্য তালিকায় প্রোটিনও রাখতে পারেন, তবে রোগীর শরীরের ওজন, র*ক্তের ক্রিয়েটিনিন, ডায়ালাইসিস চলছে কিনা, চললেও তা সপ্তাহে কয়টা চলে এইসব কিছুর উপর নির্ভর করে প্রোটিনের মাত্রা নির্ধারিত হবে।

আরো পড়ুনঃ ব্লাড সুগার কমানোর উপায়

কিডনি রোগীদের জন্য যে খাবারগুলো গ্রহণযোগ্য নয়

  • সবজির মধ্যে পালংশাক, বাঁধাকপি, ফুলকপি, মুলা, পুঁইশাক, আলু, ঢেরস, গাজর, শিমের বিচি, টমেটো, শসা, কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি।
  • ফলের মধ্যে ডাব, কলা, আঙ্গুর, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য।
  • আমিষের মধ্যে খাসী, গরু, চর্বি, ষাড়ের মাংস খুব প্রয়োজন না পড়লে পরিত্যাগ করাই ভালো। অবশ্যই খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করবেন।
  • এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে গমের পাউরুটি, গাড় রঙ্গের সোডা, আচার, টমেটো, ব্রাউন চাল, অ্যাভোকাডো, দুগ্ধজাত পণ্য, ফাস্টফুড ইত্যাদি।

খাবারের তালিকায় একটু সতর্ক থাকলেই, নিজের শরীরের রোগকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। খাবারের সঠিক চার্ট থেকে কিডনির সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

আরো পড়ুনঃ এলার্জি দূর করার উপায়

ডায়ালাইসিস মেশিনের দাম কত?

বাংলাদেশী টাকায় একটি ডায়ালাইসিস মেশিনের দাম পড়বে ১০ লক্ষ টাকা, এই বার্তাটি জানান, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম সেলিম। তাছাড়াও ডায়ালাইসিস মেশিনের কার্যক্রমে বা প্রয়োজনীয় অনেক কিছুই বিদেশ থেকে আনা হয়। বাংলাদেশে হাজারো মানুষের মধ্যে কিডনির সমস্যার সম্মুখীন যারা, তাদের মধ্যে ৪০ হাজার মানুষের কিডনি সম্পূর্ণ রুপে বিকল হয়ে পড়ছে।

(ads)

এই কিডনি বিকল হওয়া মানুষগুলোর বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি প্রতিস্থাপন করা। কিন্তু দেশে কিডনি ডায়ালাইসিস এর ব্যবস্থাও অপ্রতুল, ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী শেষ অবধি ডায়ালাইসিস ও করাতে পারেন না। ডায়ালাইসিসের খরচ এত বেশি হয়ে যায় যে, কিডনি বিকল রোগীর ৯০ শতাংশই এই ব্যায় বহন করতে পারে না।

তার একমাত্র কারণ হচ্ছে দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়ালাইসিস মেশিন নেই। ডায়ালাইসিস মেশিনের অনেক ঘাটতি যেখানে রোগী অনুযায়ী প্রয়োজন ৩০ হাজার ডায়ালাইসিস মেশিনের সেখানে আছে মাত্র ২ হাজারের মতো ডায়ালাইসিস মেশিন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

আরো পড়ুনঃ প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

সর্বশেষ

কিডনির উপসর্গগুলো লক্ষ্য করে, জটিলতা গুলোকে প্রতিরোধ করতে হবে এবং সময়মতো সু চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। কিডনি সংক্রমণের সবচেয়ে সাধারণ একটি কারণ হচ্ছে, ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI), এটা মূলত নীচের মূত্রনালী থেকে শুরু হয় এবং পরে তা আস্তে আস্তে কিডনিতে চলে যায়। এই কিডনি ইনফেকশন পরিবর্তিত হওয়া থেকে রোধ করার জন্য তাড়াতাড়ি চিকিৎসার দ্বারস্থ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

ডায়ালাইসিস শুরুর আগে প্রোটিনের পরিমাণটা সীমিত রাখতে হয়। একটি নির্দিষ্ট খাবার তালিকা তৈরি করে তা অনুসরণ করে খাবার গ্রহণ করলে কিডনি রোগ অনেকাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কিডনি রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সুস্থ ও সুন্দর থাকুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)