ইন্টারনেট কি | ইন্টারনেট কি ভাবে কাজ করে

হাসিবুর
By -
0

ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কি ভাবে কাজ করেঃ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ইন্টারনেট। আজকের দিনে ইন্টারনেট কোথায় নেই? জনসাধারণের ঘরে ঘরে, অফিসে এবং বিভিন্ন কার্যালয়ে ও মোবাইলের মাধ্যমে আমাদের সকলের হাতে হাতে ইন্টারনেট আছে। 

মানুষ এখন অনলাইনের মাধ্যমে ভিডিও, গান, মুভি ইত্যাদি দেখছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে অনলাইনে গেম খেলছে, একজন অপরের সঙ্গে কথা বলছে, ভিডিও কল করছে। আবার অনেকেই হয়তোবা বিভিন্ন বিষয়ে জানা ও জ্ঞান অর্জন করার জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইন্টারনেট পুরো ২৪ ঘন্টায় আপনাকে ব্যস্ত করে রাখতে পারবে।

বর্তমানে মানুষ না খেয়ে থাকতে পারবে না ঘুমিয়ে এবং বিনা বিদ্যুৎ সেবাতে থাকতে পারবে। কিন্তু এই ইন্টারনেট ব্যতীত তো কখনোই থাকতে পারবে না। ইন্টারনেটের এই সুবিধা আমাদের জন্যে একটি অবদান ও ইন্টারনেটের ব্যবহার না করে থাকাটা বর্তমানে আমাদের জন্যে একেবারে প্রায় অসম্ভব। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে – ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট মানে কি? কিভাবে ইন্টারনেট কাজ করে? ইন্টারনেট ব্যবহার করার লাভ এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা এবং ইন্টারনেট সম্পর্কে আমাদের জানা জরুরি কেন? চলুন তাহলে আজকে এই সকল প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিত সম্পর্কে জেনে নেইঃ

ইন্টারনেট কি

ইন্টারনেট কানেক্টেড নেটওয়ার্কের সংক্ষিপ্ত রূপ হচ্ছে ইন্টারনেট। এটা বিশেষ গেটওয়ে অর্থাৎ রাউটারের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গুলো একে অপরের সঙ্গে সংযোগ করার মাধ্যমে গঠিত হয়ে থাকে। ইন্টারনেটকে প্রায়সই নেট বলা হয়। 

ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের এমন একটি বিশাল জাল যেটা সারা বিশ্বের কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে পরস্পরে ইন্টার কানেক্টেড হয়ে আছে এবং এই কম্পিউটার নেটওয়ার্ক পরস্পর একে আরেকটি ডিভাইসের সাথে বিশ্বব্যাপী (ওয়ার্ল্ড ওয়াইড) ভাবে লিংক করা বা কানেক্ট করার জন্যে ইন্টারনেট প্রোটোকল সুট (TCP/IP) ব্যবহার করেন।

ইন্টারনেট কাকে বলে

ইন্টারনেট হচ্ছে বিশ্বের অফুরন্ত জ্ঞান ভান্ডারকে কম্পিউটারের পর্দাতে তুলে ধরার পদ্ধতি। পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অনেকগুলি কম্পিউটার কেন্দ্রিক নিরবিচ্ছিন্নভাবে নেটওয়ার্কের সমষ্টিই হলো ইন্টারনেট।ইন্টারনেট হচ্ছে সারা বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত অনেকগুলো কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টি। 

যা জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত এবং যেখানে ইন্টারনেট প্রোটোকল নামের এক প্রামাণ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাটা আদান প্রদান করা হয়। তবে অনেকেই ইন্টারনেট এবং World Wide Web কে সমার্থক শব্দ হিসাবে গণ্য করলেও প্রকৃত পক্ষ্যে শব্দদ্বয় ভিন্ন ভিন্ন বিষয় নির্দেশ করে। ইন্টারনেটের বাংলা অর্থ কি? ইন্টারনেটের বাংলা অর্থ হচ্ছে অন্তর্জাল।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কি

আমাদের অনেকেই ইন্টারনেট বলতে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বলেন। এ দুটি শব্দের বিষয় কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। আধুনিক টেলি কমিউনিকেশনের একটি নেটওয়ার্ক কিংবা মাধ্যম হচ্ছে টেলিফোন লাইন, স্যাটেলাইট, কেবল, ওয়্যারলেস কানেকশন যেগুলোকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ব্যবহার করে কম্পিউটার কিংবা অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইস গুলোকে এর সঙ্গে আমাদেরকে কানেক্ট করে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের তথ্য গ্রহণের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে হাইপার টেক্সট লিঙ্কের মাধ্যমে ইন্টারনেটে থাকা বিভিন্ন ডকুমেন্ট কিংবা ফাইলকে একে অপরের সঙ্গে কানেক্ট হয়ে থাকে। এই হাইপার টেক্সট লিঙ্কের ব্যবহার করে ইন্টারনেট ইউজাররা তাদের প্রয়োজন হিসাবে একটি ডকুমেন্ট বা তথ্যের থেকে আরেকটি ডকুমেন্ট বা তথ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারেন এবং প্রয়োজন হিসেবে নিজের কম্পিউটার থেকে সেই তথ্য বা ডকুমেন্ট গুলো প্রাপ্ত করতে পারেন। বর্তমানে সব ধরনের কম্পিউটার ডিভাইস যেমন- মডেম, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, স্মার্ট টেলিভিশন এবং আরঅ অন্যান্য ডিভাইস ইন্টারনেটের সঙ্গে কানেক্ট হতে পারে।

ইন্টারনেটের ইতিহাস

ইন্টারনেটের আবিস্কার কিন্তু মোটেঅ কোনো সহজ কাজ ছিলো না অর্থাৎ কেবল একজনের পক্ষে এই প্রযুক্তি খুঁজে বাহির করাটা সহজ কাজ না। ইন্টারনেট আবিস্কার করার জন্যে অনেক প্রোগ্রামার, সাইনটিস্ট এবং ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজন হয়েছিল।

১৯৬০ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনী এর গবেষণা সংস্থা Advanced Research Project Agencyঅর্থাৎ ARPA পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাগারের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। প্যাকেট সুইচিং পদ্ধতিতে গঠন করা এই নেটওয়ার্কটি ARPANET নামেও পরিচিত ছিলো। ১৯৮০ সালের পরে থেকে এই প্রযুক্তির নাম হয় ইন্টারনেট।

১৯৮৩ সালের ১ তারিখে ইন্টারনেটের পথচলা হয়েছিলো। ইন্টারনেট শুরু হওয়ার সময়ে একে বলা হতো নেটওয়ার্ক অব নেটওয়ার্ক। যদিওবা আজকের আধুনিক সমাজে এটির নাম ইন্টারনেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে অনলাইনের দুনিয়া পূর্বে এতোভাবে স্বীকৃত করার যোগ্য ছিলোনা। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর যখন কম্পিউটার সাইন্টিস্ট বারনার্স লে আবিষ্কার করলো ওয়ার্ল্ড ওয়াইব ওয়েব, তখন জনসাধারণের জন্য এই ইন্টারনেট হয়ে দাড়ায় অনেক কাজের, মজার ও স্বীকৃত করার যোগ্য হয়ে দাঁড়ালো।

ইন্টারনেট কি ভাবে কাজ করে

আমাদের সবার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে যে নেটওয়ার্কের এই বিশাল জাল যাকে আমরা সবাই মূলত ইন্টারনেট বলে চিনে থাকি। অর্থাৎ ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? ইন্টারনেটের সাথে আমরা কিভাবে কানেক্ট হতে পারি? অর্থাৎ কোন প্রদ্ধতিতে ইন্টারনেট কাজ করে। 

ইন্টারনেট হচ্ছে মাছ ধরার মতো একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক যা বিশ্বের বিভিন্ন কম্পিউটারের সঙ্গে কানেক্ট হয়ে আছে। ঠিক যেরকম ভাবে আমাদের বাড়ির ল্যান্ড লাইন ফোন একটি অপরটির সঙ্গে তারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে আছে।

ইন্টারনেটের কাজ সঠিকভাবে করার জন্যে তাকে তার গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সাথে ওয়্যার অর্থাৎ ওয়্যারলেস যেকোনো একটির মাধ্যমে কানেক্ট হয়েই থাকতে হবে এবং এই গ্লোবাল নেটওয়ার্কে জড়িত থাকা বিভিন্ন কম্পিউটারের সঙ্গে আমাদের কম্পিউটার রাউটার এবং সার্ভারের মাধ্যমে কানেক্ট হয়ে, বিভিন্ন ডাটা এবং তথ সংগ্রহ করে নেয়। 

এই প্রদ্ধতিতেই মুলত কাজ করে ইন্টারনেট। ইন্টারনেটের কাজের জন্যে কি কি দরকার এবং সেগুলো কিভাবে কাজ করে? চলুন জেনে নেই। ইন্টারনেটের কাজ করার জন্যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন হয়। যেমন-

১. একটি ডিভাইস যে ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে।
২. আইএসপি থেকে ইন্টারনেট পরিষেবা গ্রহণ করা। 
৩. একটি ওয়েব ব্রাউজার অথবা অ্যাপ্লিকেশান। 

ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য একটি ডিভাইসের প্রয়োজন

ইন্টারনেটে কাজ করার জন্যে সর্ব প্রথমেই প্রয়োজন হবে একটি ডিভাইসের যার সাহায্যে ইন্টারনেট চালু অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করা যাবে। সেই ডিভাইস হচ্ছে – কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট যেকোনো একটি ডিভাইস হলেই হবে। বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্মার্ট টেলিভিশন বাজারে পাওয়া যায় যেগুলোতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের থেকে ইন্টারনেট সেবা নিতে হবে

তারপর আমাদের দরকার হবে একটি ইন্টারনেট কানেকশন নেয়ার পরে আমরা আমাদের ডিভাইস বা কম্পিউটারকে ইন্টারনেটের সাথে কানেক্ট করে তাকে গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সেই বিশাল জালের সঙ্গে কানেক্ট করতে পারি।

বর্তমান সময়ে আমরা খুব সহজেই আমাদের আশেপাশে থাকা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) গুলোর কাছে থেকে ইন্টারনেট সার্ভিস নিয়ে নিতে পারি। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো যেমন– এয়ারটেল, গ্রামীণফোন, বাংলালিংক বা রবি এই কোম্পানি গুলো আমাদের টেলিকমিউনিকেশন সার্ভিস দেওয়ার সাথে সাথে ইন্টারনেট সার্ভিস ও প্রদান করে থাকে। 

ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার গুলোর থেকে ইন্টারনেট সার্ভিস ক্রয় করে বা নিয়ে এছাড়াও আমরা ওয়াইফাই বা ওয়্যারলেস যেকোনো মাধ্যমে নিজেদের কম্পিউটারে ইন্টারনেট সার্ভিস কানেক্ট করে নিতে পারি। ইন্টারনেট কানেক্ট হয়ে যাওয়ার পরে অবস্থানকে মুলত বলা হয় অনলাইন

একটি ওয়েব ব্রাউজার অথবা অ্যাপ্লিকেশানের প্রয়োজন 

যেকোনো ধরনের স্মার্ট ডিভাইসে ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্যে কিংবা ইন্টারনেটের কাজ করার জন্যে আপনার প্রয়োজন একটি ওয়েব ব্রাউজার বা অ্যাপ্লিকেশান। ওয়েব ব্রাউজার এমন একটি সফটওয়্যার যা ব্যবহার করে আপনার কম্পিউটার ডিভাইস থেকে ইন্টারনেটের সেই নেটওয়ার্কের জালের সঙ্গে কানেক্ট হতে দেয় যাকে আমরা মূলত গ্লোবাল নেটওয়ার্ক বলে থাকি।

এখন ডোমেইন, আইপি এড্রেস এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে গ্লোবাল নেটওয়ার্কের সঙ্গে কানেক্টেড অন্যান্য কম্পিউটার থেকে ইনফরমেশন, ফাইল বা ডকুমেন্ট দেখতে পারি। বর্তমান সময়ে আধুনিক ইন্টারনেট সার্ভিসের দ্বারা আমরা অন্যান্য অনেক কাজই করতে পারি। যেমন– ভিডিও দেখা, মুভি দেখা, ভিডিও কল, গেমিং করা, অনলাইন মেসেজিং, অনলাইন চ্যাটিং, ছবি শেয়ার বা ভিডিও শেয়ার করা আরো অনেক কিছুই।

ইন্টারনেটের ব্যাপারে জানাটা কেন জরুরি

বর্তমানে জ্ঞান এবং ইনফরমেশন সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ইন্টারনেটের মাধ্যমেই পাওয়া যায় এবং সব ধরণের মানুষেরা নতুন নতুন জিনিসের ব্যাপারে জানার অনেক ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন তাদের প্রথম পছন্দ ইন্টারনেট। 

অনলাইন ভিডিও বা আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়ে শিখে নিয়ে নিজের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা বাড়িয়ে নিতে পারি। বর্তমান সময়ে বেশিরভাগ মানুষ ইন্টারনেট থেকে রোজ নতুন কিছু শিখে সেগুলো নিজের জীবনে প্রয়োগ করছেন এবং অনেকেই বর্তমানে ইন্টারনেট থেকে কিছু নতুন শিখে ভালোমানের টাকা ইনকাম করছে।

বর্তমানে ইন্টারনেট যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তাই যদি আপনি ইন্টারনেট সম্পর্কে আপনি জ্ঞান না রাখেন, তবে আপনি অনেক পিছিয়ে থাকবেন এবং এতে আপনারই ক্ষতি। এই যোগাযোগের মাধ্যম আপনার জন্য অনেক কাজে লাগতে পারে। সম্প্রতি অফিসের কাজেও ইন্টারনেটের অধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। তাই এই ইন্টারনেট সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলে আপনার চাকরি ক্ষেত্রে অসুবিধা হতে পারে।

ইন্টারনেটের মালিক কে অর্থাৎ ইন্টারনেট কে উদ্ভাবন করেছে

ইন্টারনেট ব্যবস্থাটা চলে কিছু নিয়মের উপরে যাকে আমরা প্রোটোকল বলে থাকি। সেই প্রোটোকল গুলো মেনেই একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাহায্যে অন্য কম্পিউটারে তথ্য প্রদান করে। প্রোটোকল না মেনে কোনো কম্পিউটার তথ্য আদান প্রদান করতে পারেনা। বিভিন্ন কোম্পানি বা কিছু প্রতিষ্ঠান এটা নিয়ন্ত্রন করে থাকে। 

প্রত্যেকটা আলাদা আলাদা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের আলাদা ইন্টারনেট থাকে। এখন আমি এককভাবে যদি কোনো কম্পিউটার দিয়ে সেই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে থাকি তবে আমি নিজেও সেই ইন্টারনেটের মালিক বা আপনি যুক্ত হয়ে থাকলে আপনি নিজেও ইন্টারনেটের মালিক।

অর্থাৎ, আমি অথবা আপনি নিজেও ইন্টারনেটের একটা অংশের মালিক। কারণ সমগ্র ইন্টারনেটের কোনো মালিকানা হয়না। যদিওবা অনেক প্রতিষ্ঠান অথবা দেশের সরকার নিজেদের ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে, যাকে বলা হয়ে থাকে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান)। মোট কথা হচ্ছে আপনি আমি আমরা সকলেই একেক জন একেকটা ইন্টারনেট অংশের মালিক অর্থাৎ ইন্টারনেটের মালিক হচ্ছে ইন্টারনেটের ইউজাররা।

ইন্টারনেট কে আবিষ্কার করেন

আমরা পূর্বেই জেনেছি ARPANET নামের এজেন্সিতে অনেক বিজ্ঞানী, প্রোগ্রামার এবং ইঞ্জিনিয়ার কাজ করেছে। তারাই ইন্টারনেটের বিষয়ে রিসার্চ করা শুরু করেন এবং সত্যি বললে তারা সবাই ইন্টারনেটের আবিষ্কারের জন্য দায়ী। তবে ইন্টারনেট বলতে আমরা এর সবচেয়ে জরুরি ভাগ TCP/ইন্টারনেট প্রোটোকল টাকেই ভাবি এবং এই TCP/ইন্টারনেট প্রোটোকলটি Invent করেছিলেন Vincent Cerf and Robert Kahn।

ইন্টারনেট কি কি কাজে লাগে

২০২১ সালে ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং কাজের কোনো সীমারেখা নেই। প্রত্যেকটি কাজের জন্যে আমরা অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহার করছি। বর্তমান সময়ে যেকোনো জিনিসের ব্যাপারে আমরা নিমিষেই জ্ঞান পেয়ে যেতে পারি ইন্টারনেট ব্যবহার করে এবং এরকম আরো অনেক ধরণের কাজ আমরা করতে পারি যেগুলো কোনোদিন ধারণা ও করা যায়নি। চলুন জেনে নেই ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার যেগুলো বর্তমান অময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

১। দ্রুত যোগাযোগ

ইন্টারনেট অধিক ব্যবহার আমরা একজন আরেকজনের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করে থাকি। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা দেশ ও বিদেশের যেকোনো জায়গা থেকে আমাদের পরিবারের প্রিয়জনের সঙ্গে অনেক সহজেই দ্রুততার সাথে যোগাযোগ করতে পারি। যেমন- ভিডিও কলে কথা বলা, সোশ্যাল মিডিয়া চ্যাটিং, ইমেইল উ ভয়েস কল যেকোনো মাধ্যমেই হতে পারে।

২। সার্চ ইনফরমেশন

বর্তমানে মানুষ অনলাইনে অনেক বেশি সময় ব্যায় করছেন বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য খোঁজার জন্য এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ বিদেশের যেকোনো ইনফরমেশন আমরা নিমিষের মধ্যে পেতে পারি। ইন্টারনেট আপনার কাছে থাকতে যেকোনো ইনফরমেশন আপনি সেকেন্ডের মধ্যে দেখতে পারবেন।

৩। ইমেইল

ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা ইমেইল বা ইলেকট্রোনিক মেইল পাঠাতে পারি। ইমেইল অনলাইনে যোগাযোগের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। বর্তমানে ৮০% ইন্টারনেট ব্যবহার কারীরা সহজ এবং দ্রুততার সাথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইমেইল বা ইলেকট্রোনিম মেইল সার্ভিস ব্যবহার করেন।

৪। শিক্ষাক্ষেত্রে সুবিধা

বর্তমান সময়ে যেকোনো জিনিসের বিষয়ে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান অথবা শিখতে চান তাহলে চিন্তা করবেন না। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব জিনিসের বিষয়ে আপনি শিখতে পারবেন। ইন্টারনেটে সকল কিছুর ইনফরমেশন আপনি পেয়ে যাবেন।

৫। ফাইল ডাউনলোড করা 

অনেক সহজেই আমরা বিভিন্ন সার্ভার বা ওয়েবসাইট থেকে ভিডিও, ফাইল, ছবি, গান, সফটওয়্যার ডাউনলোড করে নিজের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারি। যেখানে যেকোনো ফাইল আমরা ঘরে বসে অনেক সহজে পেয়ে যাচ্ছি।

৬। অনলাইনে ইনকাম

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট একটি বিশাল কর্মক্ষেত্রের যায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অনলাইনে নিজের সামর্থ অনুযায়ী আমজনতা ইন্টারনেটকে পেশা বানিয়ে টাকা ইঙ্কাম করছে। বর্তমান সময়ে সবাই ঘরে বসে টাকা ইনকাম অনেক লাভজনক মাধ্যম। তাই আজ অনেকেই ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগিং, ফ্রিল্যান্সিং এবং আরও অন্য অনেক মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করছে।

৭। অনলাইনে কেনাকাটা

বিগত কিছু বছর পূর্বে পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনো ধরনের ধারণা কারও মনে ছিলোনা। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অনলাইনে কেনাকাটা করাটা এক ধরনের প্রচলন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আপনি ঘরে বসে থেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যা যা কিনতে চান সেগুলো স্মার্টফোনে দেখে অর্ডার করে কিনে নিতে পারবেন।

৮। বিনোদনের জন্য

বর্তমান সময়ে ৫০% ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা কেবলমাত্র মনোরঞ্জনের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন এবং বিনোদনের এই আধুনিক প্রযুক্তির সামনে অন্যান্য কোনো মাধ্যম আমাদের ভালো লাগে না। বর্তমান সময়ে সিনেমাদেখা, গান শোনা, সিরিয়েল দেখা সকল কিছু এখন হাতের লাগালে রয়েছে। আপনার যা দেখার বা শোনার কেবলমাত্র নিজের স্মার্টফোন বা কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টারনেটে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।

ইন্টারনেটের অপকারিতা

ইন্টারনেট আমাদের সভ্যতাকে ডিজিটাল বানাতে যত বেশি সাহায্য করুক না কেন? ইন্টারনেটের কিছু কিছু অসুবিধাও থেকে যায়। যেমন-

১। সারাদিন অযথাই ইন্টারনেটের আসক্তি মানুষকে আলসে বানিয়ে দিচ্ছে।

২। কিশোর ও কিশোরী, যুবক এবং যুবতী অধিকাংশের পড়াশোনার ক্ষেত্রে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে।

৩। সারাদিন ইন্টারনেটের আসক্তির ফলে অযথাই আমাদের অনেক মূল্যবান সময় অকারণে নষ্ট হচ্ছে।

৪। বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ যেমনঃ পর্ণ আসক্তি, সাইবার ক্রাইম, ড্রাগ আসক্তি, খুন, রাহাজানি, জুয়া খেলা ইত্যাদি অনেক গুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৫। পরিবারের সকলের সঙ্গে দূরত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। পারিবারিক বন্ধন শিথিল হচ্ছে অনেক গুণে। এই ইন্টারনেট ভিত্তিক জেনারেশন তুলনামূলক পরিবারকে প্রাধান্য অনেক কম দিচ্ছে।

৬। নিজস্ব সংস্কৃতি যেমনঃ গল্প বলা, বই পড়া, আড্ডা দেওয়া, একসঙ্গে বসে টেলিভিশনে ভালো কোনো প্রোগ্রাম দেখা, বাইরে খেলতে যাওয়া, বড়দের সঙ্গে সময় কাটানো ইত্যাদি উদ্ধেক জনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।

৭। বিভিন্ন রোগ যেমনঃ মাথা ব্যথা, চোখে সমস্যা, Cervical Spondylosis, ইনসোমিনা ইত্যাদি অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৮। হতাশা, হীনমন্যতা কোনো কিছু ভালো না লাগা এমনকি আত্নহত্যা করার প্রবণতাও অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।

শেষ কথা

আমি আশা করি আপনি এই ইন্টারনেট কি? ইন্টারনেট কি ভাবে কাজ করে আর্টিকেলটি অবশ্যই পছন্দ করেছেন। আমি সর্বদা এই কামনাই করি যে আপনি সর্বদা সঠিক ইনফরমেশন পান। এই আর্টিকেলটি সম্পর্কে আপনার যদি কোনো সন্দেহ থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানিয়ে দিন। 

শেষ অবধি যদি আপনি এই আর্টিকেলটি পছন্দ করেন ইন্টারনেট কি? কিভাবে ইন্টারনেট কাজ করে তবে অবশ্যই আর্টিকেলটি সমস্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)