কেন খাবেন সাবুদানা, জেনে নিন সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা

হাসিবুর
By -

সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা - সাবুদানা, যা সাগু নামেও পরিচিত, যা পাম গাছের মূল থেকে তৈরি একটি জনপ্রিয় খাবার। সাবুদানা দ্রুত ও সহজে রান্না করা যায়, এবং এর স্বাদ সকলের কাছেই পছন্দনীয়। সাবুদানা শুধু সুস্বাদুই নয়, এর অসংখ্য স্বাস্থ্য উপকারিতাও রয়েছে।

সাবুদানা এমন একটি খাবার যা ছোট কিংবা বড় সকলেই খেয়ে থাকেন। তবে হ্যাঁ আমাদের দেশে বেশিরভাগ মায়েরা শিশুদের খাবার হিসেবে ব্যবহার করে এটি। সাগু বা সাবুদানা একটি স্টার্চ জাতীয় খাবার যা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর খাবারের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে পারে। আমাদের দেশে দেখা যায় সাধারণত জ্বর হলে রোগীদের এই খাবারটি খাওয়ানো হয়।

সাবুদানা সব বয়সী মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। সাবু তৈরির মূল উপকরণ পাম জাতীয় গাছের মূল (মেট্রোক্সিলন সাগু) থেকে বের হওয়া সাদা দুধের মতো একপ্রকারের রস। এই রস প্রথমে শুকিয়ে নেওয়া হয় ও আটার মতো গুড়োতে পরিণত করা হয়। তারপর সেটাকে যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে ছোট ছোট দানায় পরিণত করা হয়ে থাকে, সেটাকে আমরা সাবুদানা বা সাগু বলি।

মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার এবং দেহের সার্বিক উন্নতির ক্ষেত্রে সাবুদানার উপকারিতা অপরিসীম। আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত। চলুন তাহলে সাবুদানা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক:

সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা

(toc) #title=(সুচিপত্র)

সাবুদানার উপকারিতা সমূহ

  • সাবুদানা ব্লাড প্রেসার কমায়
  • সাবুদানা হাড় মজবুত রাখে
  • সাবুদানা ক্যান্সারের প্রতিরোধক
  • শরীরে শক্তি যোগাতে সাবুদানার উপকারিতা
  • সাবুদানা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে
  • মোটা হতে সাবুদানার ভূমিকা
  • গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা
  • চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাবুদানা
  • গ্লটেনমুক্ত খাদ্য
  • মুখের স্বাদ ফেরায়

১. সাবুদানা ব্লাড প্রেসার কমায়

সাবুদানাতে আছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তারা প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সাবুদানা রাখতে পারেন। এটা আপনার উচ্চ রক্তচাপ কমাবে। যার ফলে আপনি ব্রেন স্টোক বা প্যারালাইসিস এর মত বড় রোগ থেকে সুরক্ষা পেতে পারবেন।

২. সাবুদানা হাড় মজবুত রাখে

সাবুদানাতে আছে আয়রন, ক্যালসিয়াম এগুলো হাড় মজবুত করার জন্য খুবই উপকারী। তাই বাচ্চা বা বয়স্কদের নিয়মিত সাবুদানা খাওয়ালে যেমন হাড় মজবুত হয় তেমনি হাড়ের ঘনত্বও বাড়ে। তাছাড়া অস্টিওপোরোসিসের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

৩. সাবুদানা ক্যান্সারের প্রতিরোধক

সাবুদানাতে ট্যানিন ও ফ্লেভানয়েড নামে দুটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। যা ফ্রি রেডিক্যালগুলো নষ্ট করে আমাদের ক্যান্সারের মতো মারণব্যাধি থেকে সুরক্ষা দেয়।

৪. শরীরে শক্তি যোগাতে সাবুদানার উপকারিতা

এটি একটি সরল শর্করা জাতীয় খাদ্য। এটি সরল শর্করা হওয়ায় খাদ্য পরিপাকে কোনো সমস্যা দেখা যায় না এবং খুব দ্রুত হজম হয়। এতে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও সামান্য পরিমাণ খনিজ লবণও থাকে। যার ফলে এটি খাওয়ার পরে শরীরে দ্রুত শক্তি পায়। অনেকে ব্যায়াম করার আগে বা পরে সাবুদানা খেয়ে থাকে। তাই শরীর দুর্বল লাগলে চটপট রান্না করা সাবুদানা খেয়ে ফেলুন।

৫. সাবুদানা হজমশক্তি বৃদ্ধি করে

সাবুদানাতে আছে পানিতে দ্রবণীয় তন্তু বা আঁশ। যা পৌষ্টিক নালীকে পরিষ্কার রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা দূরে রাখে। 

৬. মোটা হতে সাবুদানার ভূমিকা

যাদের ওজন বাড়াতে হবে তাদের জন্য এটি অনেক উপকারী। এ ছাড়া অনেক শিশুদের ওজন বাড়াতে সাবুদানা খাওয়ানো হয়। আমরা জানি, সাগুদানা আমাদের শরীরের হজমী শক্তি বৃদ্ধি করে। যার ফলে আমাদের বেশি বেশি খিদে পায় এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

৭. গর্ভাবস্থায় সাবুদানা খাওয়ার উপকারিতা

সাবুদানা গর্ভবতী নারীদের খাদ্য তালিকায় একটি উত্তম সংযোজন। এটি গর্ভবতী নারীদের ক্লান্তি দূর করে। এ ছাড়া সাবুদানায় থাকা ভিটামিন বি৬ এবং ফোলেট ভ্রূণের বিকাশ ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে ডায়াবেটিস হলে সাবুদানা না খাওয়াই ভালো।

৮. চুলের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাবুদানা

সাবুদানা সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে সহায্য করে। সাবুতে থাকা প্রোটিন চুলের ঝরে পড়া রোধ করে, চুল গজাতে সাহায্য করে, সর্বপরি চুলের বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণ করে।

৯. গ্লটেনমুক্ত খাদ্য

সাবুর মতো গ্লুটেনবিহীন খাদ্য উপাদান প্রকৃতিতে বিরল। গ্লুটেন মূলত একধরনের জটিল প্রোটিন। গম, রাই, বার্লিতে গ্লুটেন থাকে। মূলত রুটি, পাউরুটি, পাস্তা, কেক এসব খাবার গ্লুটেন থাকে। গ্লুটেন কিছু কিছু মানুষের দেহে অ্যালার্জি সৃষ্টি করে। বর্তমানে অনেকেই গ্লুটেনমুক্ত খাবার খেতে চান। সাবু গ্লুটেন মুক্ত। তাই এটি গম বা বার্লির বিকল্প হিসেবে খাওয়া যেতে পারে।

১০. মুখের স্বাদ ফেরায়

রোগগ্রস্ত অবস্থা থেকে মুক্তির সময়ে মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে সাবু। সাধারণত আমরা জ্বর থেকে সেরে ওঠার সময় সাবুদানা খেয়ে থাকি। সাবুদানার উপকারিতা বহুবিধ তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সাবুদানা রাখলে স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে।

আরো পড়ুন: প্রাকৃতিক ভাবে হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায়

সাবুদানার অপকারিতা

১. সাবুদানা খাওয়ার ফলে তেমন কোন অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। কিন্তু খাওয়ার আগে যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণ না করা হলে বমি হতে পারে বা লিভারে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

২. সাবুদানাতে বেশি মাত্রায় শর্করা এবং ক্যালোরি থাকায় এটি শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে। তাই যারা মোটা হতে চান না তারা এ খাবারটি এড়িয়ে চলুন।

৩. ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাবুদানা পরিহার করা উচিত কারণ এতে থাকা উচ্চ পরিমাণ ক্যালরিও শর্করা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৪.যেহেতু সাবুদানায় প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে, তাই বেশিক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখার পরিবর্তে এর অতিরিক্ত চিনি আপনাকে ক্ষুধার্ত করে তুলতে পারে। এ সকল ক্ষেত্রে ছাড়া আর অন্য ক্ষেত্রে সাবুদানার অপকারিতা তেমন ভাবে লক্ষণীয় নয়। 

সাবুদানা বা সাগু কেন শিশুদের প্রথম খাদ্য

এটি সহজে হজম হয়। এছাড়াও এটি কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ছোট বাচ্চাদের অন্যান্য পেটের রোগ যেমন- গ্যাস্টিক, ডায়রিয়া, ইত্যাদি সারাতে সাহায়তা করে করে। যে শিশুরা সবে শক্ত খাবার খাওয়া শুরু করেছে তাদের হজমশক্তি কম হয় আবার খাবার চিবাতে পারে না তাদের উপযুক্ত খাবার নির্বাচন করা সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ প্রতিদিনের সেই খাবারটিকে হতে হবে সহজপাচ্য ও পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ এবং শিশুটি যেন সহজেই তা গিলতে পারে।

শিশুদের সাবু খাওয়ার উপকারিতা

সাবু শর্করা জাতীয় খাদ্য হওয়ায় এটি ভাত বা রুটির সমপর্যায় ভুক্ত খাদ্য। কিন্তু ছোট বাচ্চাদের জন্য ভাত ও রুটি অপেক্ষাকৃত শক্ত এবংসহজে হজমযোগ্য নয় বলে সাবুকে ভাত ও রুটি বিকল্প হিসেবে খাওয়ানো হয়ে থাকে। ছয় মাস বয়সের পর থেকে শিশুদের সাবু খাওয়ানো হয়ে থাকে। সচেতন পিতা মাতা সাবু খাওয়ার উপকারিতা জানার কারণে বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় এটিকে নিয়মিত ভাবে সংযুক্ত করে।

আরো পড়ুন: বাচ্চা পেটে আসলে কোন মাসে কোন সূরা পড়তে হয়

সাবুদানা খেলে কি মোটা হওয়া যায়

অনেকে প্রশ্ন করেন সাবুদানা খেলে কি মোটা হওয়া যায়? হ্যাঁ, কেননা সাবুদানা শর্করা জাতীয় খাদ্য হওয়ায় ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তাই যারা মোটা হতে চান তাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় সাবুদানাকে সংযোজন করুন।

দুধ সাবু খাওয়ার উপকারিতা

সাধারণত আমরা দুধের সাথে সাবু একসাথে রান্না করে খেয়ে থাকি। দুধ একটি সুষম খাবার। তার পাশাপাশি দুধে থাকা ক্যালসিয়াম এবংসাবুতে শর্করা আমাদের দৈহিক বৃদ্ধিতে অনেক ভূমিকা রাখে। তাই ছোট বাচ্চাদের সহজ পাচ্য এবং উচ্চগুণ সম্পন্ন পুষ্টি হিসেবে দুধ উপকারিতা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সাবুদানা কীভাবে খাবেন?

এটি যে কোন সবজির সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া হয় বা খিচুড়ি বানিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে আবার সাবুদানার বড়া বা ক্ষীর বানিয়েও খেয়ে থাকে। এছাড়া যেকোন ডেজার্ট বা জুসেও মিশিয়ে খাওয়া যায়।

সাবুদানা আসল কিনা চিনবেন কীভাবে

অনেক সময় বাজারে নকল সাবু বিক্রি হয়। তাই আসল এবং নকল সাবুদানার মধ্যে পার্থক্যটা জানা খুবই জরুরী।

  • নকল সাবুদানা পানিতে দিলে দ্রুত গলে যায় কিন্তু আসল সাবুদানা গলে না।
  • নকল সাবুদানা ময়দা বা আটা দিয়ে তৈরি করা হয়।
  • আসল সাবুদানা পানিতে দেয়ার পর নাড়া দিলেও পানি স্বচ্ছ ও পরিস্কার থাকে, ঘোলাটে হয়না। অন্যদিকে নকল সাবুদানা পানিতে মেশালে পানি ঘোলাটে হয়ে যায়।

রান্নার জন্য সাবুদানা প্রস্তুত পদ্ধতি

১। প্রথমে সাবুদানাও ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে।

২। সারা রাত এগুলি ভেজাতে পারেন অথবা যতক্ষণ না স্বচ্ছ হয়ে যায় ততক্ষণ সিদ্ধ করতে পারেন।

সাবুদানা রান্নার আগে এই প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক।

সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে লেখকের শেষকথা

যদিও আমরা সাবুদানাকে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখিনা। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি অথবা বৃদ্ধ এবং শিশুদের রোগ থেকে সেরে ওঠার সময় সাবুদানা উপকারিতা বর্ণনাতীত। কিছু বিশেষ ব্যতিক্রম ক্ষেত্র ছাড়া সাবুদানার অপকারিতা লক্ষ্য করা যায় না। তাই আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় সাবুদানা রাখা উচিত।

Tags:

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Learn more
Ok, Go it!