গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

হাসিবুর
By -
0

খাবারের স্বাদ এবং সৌন্দর্য বাড়াতে কিসমিসের ব্যবহার হয়ে থাকে। এতে বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তবে যে শুধুমাত্র উপকারিতা রয়েছে তা নয়। কিসমিস খাওয়ার এক দুইটি অপকারিতা রয়েছে। তাই এই আর্টিকেল কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করছি।

(toc) #title=(সুচিপত্র)

কিসমিস কি

গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

আঙ্গুর ফলকে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। এটি একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য এবং স্বাদ ও পুষ্টির একটি সহজলভ্য উৎস। তাছাড়া কিসমিসের অসাধারণ পুষ্টিগুণ আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা

  • অ্যান্টি অক্সিডেন্ট
  • রক্ত উৎপাদন করে
  • দেহে শক্তি জোগায়
  • হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা
  • কোলেস্টেরল কমায়
  • মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়
  • কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
  • অনিদ্রা দূর করে
  • ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে
  • ভালো রাখে মুখের স্বাস্থ্য
  • দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে
  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

অ্যান্টি অক্সিডেন্ট: কিসমিসের রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা আমাদের শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তাছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হৃদরোগের রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে থাকে। কিসমিসে রয়েছে পটাশিয়াম নামক একটি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের হার্টকে ভালো রাখে। তাছাড়া এটি খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতেও কাজ করে।

রক্ত উৎপাদন করে: গর্ভাবস্থায় কিসমিস খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়। আমাদের শরীরে আয়রনের অভাব হলে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই কিসমিস খাওয়ার মাধ্যমে আয়রনের অভাব পূরণ করে রক্তস্বল্পতা কিছুটা হলেও দূর করা সম্ভব। একমুঠো কিসমিসে যে পরিমাণ আয়রন থাকে তা দিয়ে একজন মানুষের প্রতিদিনের চাহিদার প্রায় তেইশ শতাংশ পূরণ করা সম্ভব হয়।

দেহে শক্তি জোগায়: দুর্বলতা দূর করতে কিসমিস একটি উত্তম খাদ্য। কেননা কিসমিসের রয়েছে গ্লুকোজ এবং ফ্রূকটোজ যেগুলো তৎক্ষণাৎ আমাদের দেহে শক্তি এনে দেয়।

হাড় ও দাঁতের সুরক্ষা: কিসমিসের অনেকগুলো উপাদানের মধ্যে একটি উপাদানের নাম হলো ক্যালসিয়াম। এই ক্যালসিয়াম দাঁত ও হাড় মজবুত করতে বেশ কার্যকর। এছাড়াও কিসমিসে রয়েছে বোরন নামে একটি পুষ্টি উপাদান। যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে। হাড়ের ক্ষয় বাতের ব্যথা দূর করতে আপনি নিয়মিত কিসমিস খেতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ সাবুদানার উপকারিতা ও অপকারিতা

কোলেস্টেরল কমায়: কিসমিস খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। কেননা এতে রয়েছে এন্টি-কোলেস্টেরল উপাদান।

মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়: কিসমিসে রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট। বোরন মস্তিষ্কের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটা মস্তিষ্কের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়, হাত ও চোখের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করে, আবার মনোযোগ বাড়াতেও সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে: কিসমিস আমাদের পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করে তোলে। কেননা, কিসমিস রয়েছে ফাইবার যা হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করতে ভূমিকা রাখে। তাই হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখতে কিসমিস খেতে পারেন।

অনিদ্রাঃ আগেই বলেছি কিসমিসের থাকে আয়রন নামে একটি পুষ্টি উপাদান। যা অনিদ্রা দূর করতে ভূমিকা রাখে। কিশমিশের মধ্যে রয়েছে প্রচুর আয়রন যা মানুষের অনিদ্রার চিকিৎসায় বিশেষ উপকারী।

ইনফেকশন থেকে রক্ষা পেতে: কিসমিসে উপস্থিত পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরি উপাদান সমূহ কাটা বা ক্ষতস্থান হতে ইনফেকশন হওয়া থেকে দূরে রাখে।

ভালো রাখে মুখের স্বাস্থ্য: কিসমিসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ওলিনোলিক অ্যাসিড, এই উপাদানটির ফলে মুখের ভিতর ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না অন্যদিকে দাঁত ও মাড়ি সুরক্ষিত থাকে। ফলে ক্যাভিটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি: ভিটামিন এ, এ-বিটা ক্যারোটিন এবং এ-ক্যারোটিনয়েড এই পুষ্টি উপাদান গুলো আমরা কিসমিস থেকে পাই। যেগুলো আমাদের চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: কিসমিসে উপস্থিত পটাশিয়াম নামক পুষ্টি উপাদানটি উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়ার অপকারিতা

  • কিসমিস মিষ্টি জাতীয় হাওয়ায় বেশি পরিমাণে মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। তাই গর্ভবতী মায়েরা যদি বেশি করে কিসমিস খান তাহলে তার এবং তার অনাগত সন্তানের উপর ডায়াবেটিস হওয়ার একটি ঝুঁকি থেকেই যায়।
  • তাছাড়া কিসমিসে প্রচুর পরিমাণে শর্করা থাকে যার ফলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়ে যায়।
  • আঙ্গুর ফল সতেজ রাখতে বিভিন্ন ধরনের এর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে এবং সেই আঙ্গুল দিয়ে যখন কিসমিস বানানো হয় তখন কীটনাশক কিন্তু থেকে যায়। যার ফলে গর্ভাবস্থায় কীটনাশক প্রয়োগকৃত কিসমিস খেলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া কি উচিত

গর্ভাবস্থায় কিসমিস একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টির উৎস। এটি একটি স্বাস্থ্যকর, প্রাকৃতিক খাদ্য যা গর্ভাবস্থায় খাওয়ার জন্য খুবই উপকারী। তাই গর্ভাবস্থাকালীন খাদ্য তালিকায় কিশমিশ অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন। তবে সাধারণভাবে গর্ভাবস্থায় কিশমিশ খাওয়া নিরাপদ হলেও পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত। তা না হলে বিভন্ন সমস্যা হতে পারে।

কোন আত্নীয়ের বাড়ি বেড়াতে গেলে এক বাক্স মিষ্টি না নিয়ে এক কেজি আঙ্গুর নিয়ে যেতে পারেন।যেহেতু আঙ্গুরের পুষ্টি উপাদান এবং স্বাদ অসাধারণ।

কিসমিসের পুষ্টি উপাদান

ড্রাই ফ্রুট হিসেবে কিসমিসের জনপ্রিয়তা অনেক। সেমাই, পোলাও, পায়েস থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরনের খাদ্যে কিসমিসকে ড্রাই ফ্রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তবে এমনিতেও কিসমিস খাওয়া যায়। কিসমিসের পুষ্টি উপাদান গুলো হলো- প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, ফাইবার, পটাশিয়াম, ভিটামিন বি ৬, কপার ইত্যাদি।

কিসমিস ভিজিয়ে খাওয়ার নিয়ম

৪০ গ্রাম মতো কিসমিস ভালো ধুয়ে নিন। এরপর ১ গ্লাস পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখবেন। পরের দিন সকালে খালি পেটে সেই কিসমিস এবং পানি খেয়ে নিবেন। তবে কিসমিস খাওয়ার আধা ঘন্টার মধ্যে কিছু খাওয়া চলবে না। আধাঘন্টা পর আপনি অন্যান্য খাবার খেতে পারেন।

কিসমিস খেলে কি মোটা হওয়া যায়

কিসমিসে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি থাকে। ফলে এটি আপনাকে ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে। মাত্র ১০০ গ্রাম কিসমিস থেকে আপনি প্রায় ২১৮ ক্যালরির পুষ্টি পাবেন।

কিন্তু মোটা হওয়ার উদ্দেশ্যে কিসমিস খেলে অনেক কিসমিস খেতে হবে যা আপনার জন্য ব্যয়বহুল হতে পারে। অন্যদিকে বেশি কিসমিস খেলে আবার ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। তাই যারা ওজন বাড়াতে চান তারা অন্যান্য খাদ্যের পাশাপাশি অল্প পরিমাণে কিসমিস খেতে পারেন। তবে শুধুমাত্র কিসমিসের উপর নির্ভরশীল হয়ে ওজন বাড়াতে চাইলে এটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে।

প্রতিদিন কতটুকু কিসমিস খাওয়া উচিত

বিভিন্ন পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী আপনি দিনে সাধারণত ৪০ থেকে ৫০ গ্রাম কিসমিস খেতে পারেন, কম খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু বেশি খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই ৫০ গ্রামের মধ্যে কিসমিস খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে এর বেশি যেন না হয়।

গর্ভাবস্থায় কিসমিস খাওয়া নিয়ে সতর্কতা

ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে কিসমিস খেতে হবে। কেননা আমরা জানি আঙ্গুর রোদে শুকিয়ে কিসমিস তৈরি করা হয়। আঙ্গুর শুকানোর সময় আঙ্গুর বিভিন্ন ধরনের মাছি বা পোকা বসে জীবানু ও ছড়াতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণে কিসমিস খাওয়া পরিহার করা উচিত। কেননা অতিরিক্ত কোন কিছু খাওয়া ভালো না।

কেন কিসমিস খাবেন

আঙ্গুর এবং কিসমিস একই জিনিস। কিন্তু আঙ্গুর কাঁচা অবস্থায় পচনশীল। আঙ্গুর বাজার থেকে কিনে আনার পর এটিকে বাড়িতে সর্বোচ্চ এক সপ্তাহ ভালো ভাবে রাখতে পারবেন। কিন্তু বারবার তো বাজার গিয়ে আঙ্গুর কেনার একটা বিরক্তির বিষয়। অন্যদিকে সব মৌসুমে সব জায়গায় আঙ্গুর পাওয়া যায় না।

সেক্ষেত্রে আঙ্গুরের পুষ্টি যোগান দিতে রয়েছে কিসমিস। বাড়িতে সারা বছর সংরক্ষণ করা যায়। তাই আঙ্গুরের পরিবর্তে কিসমিস খেতে পারেন। আমরা সাধারণত বাজার থেকে সোনালী কিসমিস কিনে থাকি। কিন্তু কালো আঙ্গুর থেকে তৈরি হওয়া কালো কিসমিসও অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই কালো কিসমিস ও খেতে পারেন।

আশা করি আর্টিকেলটির মাধ্যমে গর্ভবতী মায়ের কিসমিস খাওয়ার উপকারিতা, কিসমিস খাওয়ার নিয়ম, কিসমিসের পুষ্টিগুণ এসব বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা লাভ করেছেন। তাই কিসমিস খেয়ে এর উপকারিতা উপলব্ধি করুন এবং অন্যদের কিসমিস খেতে উৎসাহিত করুন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)